বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ২০২৫-এর সিলেট পর্বে বরিশাল বনাম রাজশাহীর ম্যাচে ক্রিকেটপ্রেমীরা উপভোগ করেছেন দারুণ উত্তেজনা। রাজশাহী দলের ব্যাটিংয়ের পর বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবালের দুর্দান্ত ইনিংস ক্রিকেট মাঠে যেন ঝড় তুলেছিল। তামিমের নেতৃত্বে ফরচুন বরিশাল ৭ উইকেটের সহজ জয় তুলে নিয়ে সিলেট পর্বে একটি দাপুটে শুরু করে।
![]() |
তামিম ঝড়, বরিশালের উড়ন্ত জয় |
ম্যাচের সূচনা: রাজশাহীর দারুণ শুরু
রাজশাহী কিংসের ব্যাটিং শুরুটা ছিল অনবদ্য। ওপেনার জিসান আলম ও মোহাম্মদ হারিসের মেলবন্ধনে দলের প্রথম ১০ ওভারে ওভার প্রতি প্রায় ১০ রান করে স্কোর এগোয়। তবে এই দারুণ শুরু ধরে রাখতে পারেননি তাদের মিডল অর্ডার। জিসানের বিধ্বংসী ইনিংস ও হারিসের গতিময় ব্যাটিং শেষে অন্য ব্যাটারদের ইনিংস সেভাবে গতি পায়নি।
ইনিংসের মাঝপথে এনামুল হক বিজয়ের মন্থর ব্যাটিং চাপ বাড়িয়ে দেয়। যদিও ইয়াসির আলির ঝোড়ো ৩৭ রানের ইনিংস কিছুটা স্বস্তি দেয়, তবে ১৮০-১৯০ রানের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।
রাজশাহীর সংগ্রহ: আশা-হতাশার মিশেল
রাজশাহীর ইনিংসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল:
- জিসান আলমের বিধ্বংসী শুরুর ইনিংস: তিনি শুরুতেই বরিশালের বোলারদের চাপে রেখেছিলেন।
- বিজয়ের মন্থর ইনিংস: ৩৫ বলে ৩৯ রানের ইনিংসের জন্য ভক্তদের হতাশ হতে হয়।
- ইয়াসির ও আকবরের ক্যামিও: ইয়াসির আলি ও আকবর আলির ছোট কিন্তু কার্যকর ইনিংস দলকে ১৬৮ রানে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
তবে এদিন রাজশাহীর ব্যাটিং লাইনআপের জন্য এই সংগ্রহ অপর্যাপ্ত বলে প্রমাণিত হয়।
তামিম ইকবালের তাণ্ডব: বরিশালের জয় সুনিশ্চিত
রাজশাহীর ১৬৮ রানের জবাবে বরিশাল মাঠে নেমেই দেখিয়ে দেয় তাদের দৃঢ়তা। অধিনায়ক তামিম ইকবাল একপ্রান্ত আগলে রেখে দারুণ ব্যাটিং প্রদর্শন করেন।
তামিমের মারমুখী ইনিংস
তামিমের ইনিংসটি ছিল নিখুঁত। তার ১১টি চার ও ৩টি ছক্কা মেরে মাত্র ৪৮ বলে ৮৬ রান দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসে।
- প্রথম ছক্কায় আগ্রাসন: তৃতীয় ওভারে তাসকিন আহমেদকে ছক্কা মেরে তামিম ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
- পাওয়ার প্লেতে ঝড়ো রান: মোহর শেখের ওভার থেকে চার ও ছক্কা মেরে বরিশালের অবস্থান শক্তিশালী করেন।
কাইল মায়ার্সের কার্যকরী ইনিংস
ক্যারিবিয়ান ব্যাটার কাইল মায়ার্স ১১ বলে ২৪ রান করে তামিমের সঙ্গে একটি শক্ত ভিত তৈরি করেন।
মুশফিকুর রহিমের সমর্থন
তামিমের সঙ্গী হয়ে মুশফিকুর রহিম তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অপরাজিত ২৪ বলে ৩৪ রান করেন।
রাজশাহীর বোলারদের ব্যর্থতা
রাজশাহীর বোলাররা তামিমের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। তাসকিন আহমেদ, শফিউল ইসলাম ও হাসান মুরাদের মতো বোলাররাও কোনো প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হন।
তামিম ইকবালের নেতৃত্ব: জয় এনে দেওয়া একজন ক্যাপ্টেন
তামিম ইকবালের ব্যাটিং শুধু নয়, তার অধিনায়কত্বও ছিল নজরকাড়া। দলকে সঠিক পথে পরিচালনা করার দক্ষতা মাঠে স্পষ্ট ছিল।
ম্যাচের প্রধান দিকগুলো
- তামিমের ইনিংসের ধারাবাহিকতা: তার ইনিংস বরিশালের জন্য ছিল বিজয়ের ভিত্তি।
- রাজশাহীর ব্যাটিং মন্দা: ভালো শুরু এনে দিয়েও শেষ করতে ব্যর্থ হওয়া।
- মুশফিকের শান্ত থাকা: শেষের দিকে বড় শট খেলে জয় নিশ্চিত করেন।
- বোলারদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা: রাজশাহীর বোলাররা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সঠিক লাইন-লেংথে বল করতে পারেননি।
![]() |
তামিম ঝড়, বরিশালের উড়ন্ত জয় |
বিপিএল ২০২৫: ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এই ম্যাচ থেকে বরিশাল ও রাজশাহী উভয় দলের জন্য শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে।
- বরিশালের জন্য: তাদের ওপেনিং কম্বিনেশন বজায় রাখতে হবে।
- রাজশাহীর জন্য: মিডল অর্ডার ও বোলারদের আরও ভালো পরিকল্পনা দরকার।
সর্বশেষ: তামিম ঝড়ের গল্প
সিলেটের মাঠে তামিম ইকবালের এই দুর্দান্ত ইনিংস অনেক দিন মনে রাখবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিপিএল ২০২৫-এর এই ম্যাচ শুধু বরিশালের জয় নয়, বরং তামিমের ক্যারিশমাটিক ব্যাটিংয়ের একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।
FAQs
তামিম ইকবাল এই ম্যাচে কত রান করেন?
তামিম ইকবাল ৪৮ বলে ৮৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন।
বরিশালের জয়ের পার্থক্য কত?
বরিশাল ৭ উইকেটের ব্যবধানে জয় পায়।
রাজশাহী কত রান সংগ্রহ করেছিল?
রাজশাহী প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ১৬৮ রান তোলে।
কাইল মায়ার্স কত রান করেন?
কাইল মায়ার্স ১১ বলে ২৪ রান করেন।
তামিমের সেঞ্চুরি হয়নি কেন?
দল জয়ের পথে পৌঁছে যাওয়ায় তার সেঞ্চুরি করার প্রয়োজন হয়নি।
রাজশাহীর ব্যাটিংয়ের প্রধান সমস্যা কী ছিল?
বিজয়ের ধীরগতির ইনিংস এবং মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা।